অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম এবং দেশের ৫৪তম বাজেট আজ। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করবেন।সোমবার (২ জুন) বিকেল ৩টায় অর্থ উপদেষ্টা বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারে পূর্ব-ধারণকৃত বাজেট বক্তৃতা পেশ করবেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু পন্যের ওপর শুল্ক কর কমানো ও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আবার বেশ কিছু পন্যের ওপর শুল্ক কর বাড়ানো ও নতুন করে করারোপ এবং অব্যাহতি বাতিল করা হচ্ছে। যে পন্যগুলোর ওপর শুল্ক কর কমানো ও অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে সেসব পণ্যের দাম কমতে পারে।চিনি আমদানিতে শুল্ক কমছে: প্রস্তাবিত বাজেটে পরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক প্রতি টন ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৪ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। আগে থেকেই এ খাতে শুল্ক-কর হ্রাসে সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। ফলে চিনির দাম স্থিতিশীল ও কমতে পারে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎসে কর কমছে : নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিতে উৎসে কর কমানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে। এখন এসব পণ্যে ১ শতাংশ উৎসে কর থাকলেও তা অর্ধেকে নামানো হতে পারে। ফলে ধান, গম, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, লবণসহ নানা ভোগ্যপণ্যের দাম কমতে পারে। সরকার মনে করছে, উৎসে কর রাজস্বে তেমন প্রভাব না ফেললেও ব্যবসায়ীরা এটিকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করেন। তাই উৎসে কর কমিয়ে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।এলএনজি: বাজেটে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। এখন এলএনজি আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হয়। এটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কারখানার জ্বালানি খরচ কমাতে সহায়তা করবে।
পরিবেশবান্ধব পণ্য: শালপাতা, নারিকেলপাতা, খোলসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি প্লেট (বাসন), বাটি, টেবিল ওয়্যারসহ বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র বানানো হয়। এসব পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে বাজেটে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এখন এসব পণ্য উৎপাদনে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। মাটির তৈজসপত্রের উৎপাদন পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে।দেশীয় বলপেন বা কলম: দেশীয় কোম্পানিকে সুরক্ষা দিতে বলপয়েন্ট বা কলমের আমদানি পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এছাড়া, বলপয়েন্ট পেনের স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি প্রদান করা হচ্ছে। দেশি বলপেনের দাম কমতে পারে।
কম্পিউটার মনিটর: ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত কম্পিউটার মনিটরের ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতির প্রস্তাব করা হচ্ছে। তবে মনিটর স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদনের ক্ষেত্রে এই মূসক অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ২২ ইঞ্চি পর্যন্ত কম্পিউটার মনিটর ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি রয়েছে। ফলে মনিটরের দাম কমতে পারে। প্যাকেটজাত তরল দুধ: প্যাকেটজাত তরল দুধের ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে। ফলে দুধের দাম স্থিতিশীল বা কমতে পারে।
স্যানেটারি ন্যাপকিন, ডায়াপার: স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপারের কাঁচামাল আমদানিতে মূসক ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া রয়েছে। অব্যাহতির মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন শেষ হচ্ছে। বাজেটে এই অব্যাহতির মেয়াদ ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হচ্ছে। সঙ্গে অব্যাহতির তালিকায় স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপারের অত্যাবশ্যকীয় কাঁচামাল হিসেবে ‘জিআই ফ্লাফ পাল্প আনথ্রেটেড’ অন্তর্ভূক্ত করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। ফলে কমতে পারে স্যানেটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপারের দাম।
চামড়া শিল্পের রাসায়নিকে শুল্ক ছাড়: চামড়া শিল্পের সম্ভাবনা বিবেচনায় কিছু রাসায়নিক উপাদানে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। ফলে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে খরচ কমবে।সয়াবিন ও কাগজ শিল্প: দেশীয় শিল্প ও উৎপাদন খাতে সহায়তায় প্রস্তাবিত বাজেটে সয়াবিন মিল, কাগজশিল্প এবং নিউট্রালাইজড সয়াবিন তেলের ওপর শুল্ক রেয়াতের প্রস্তাব করা হচ্ছে। নির্মাণ ও শিরিষ কাগজ শিল্পে ব্যবহৃত ফেনোলিক রেজিন ও স্যান্ডপেপারের শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ কমে দাম কমবে, যা শিল্প খাত কিছুটা স্বস্তিতে থাকতে পারে। সংবাদপত্রের নিউজপ্রিন্ট: বাজেটে সংবাদপত্রের শিল্পে ব্যবহৃত নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ৫ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। ফলে সংবাদপত্রে ব্যবহৃত নিউজপ্রিন্টের দাম কমতে পারে।
ক্রিকেট ব্যাট: ক্রিকেট ব্যাট তৈরির কাঠ আমদানিতে শুল্ক ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৬ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে বাজেটে। এতে ক্রিকেট ব্যাটের দাম কমতে পারে এবং তা রপ্তানি বাড়তে পারে।দেশি সফটওয়্যার উন্নয়নে বাড়তি সুবিধা: তথ্যপ্রযুক্তি খাত ও সফটওয়্যার রপ্তানি উৎসাহিত করতে বিদেশি অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ, ডেভেলপমেন্ট টুলস ও সিকিউরিটি সফটওয়্যারে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব থাকছে বাজেটে। এতে ফ্রিল্যান্সার ও দেশীয় আইটি প্রতিষ্ঠানের খরচ কমতে পারে।বিদেশি জুস: নন-অ্যালকোহলিক জুস আমদানির ওপর সম্পূরক শুল্ক ১৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০০ শতাংশ করার প্রস্তাব থাকছে বাজেটে। ফলে বিদেশি জুসের দাম কমতে পারে।
পিভিসি পাইপ ও কপার ওয়্যার: পিভিসি পাইপ, কপার ওয়্যার, মোটরশিল্প, ব্যাটারিশিল্প, লিফটম, এলইডি বাতি, রাইস ব্র্যান ওয়েল, টায়ার-টিউব দেশে উৎপাদন করা হয়। পিভিসি পাইপ দেশে উৎপাদন করা হলেও এর উপকরণ আমদানি করতে হয়। অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহৃত পিভিসি পাইপের উপকরণ আমদানিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ এবং কপার ওয়্যারের উপকরণ আমদানিতে শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে বাজেটে। ফলে এসব পন্যের দাম কমতে পারে।
জ্বালানি তেল: বাজেটে ক্রুড ফুয়েল অয়েলের শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ এবং অন্যান্য জ্বালানি আমদানিতে ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হযেছে। এতে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমতে পারে। এছাড়া, পরিবহনের টায়ার, টিউব, ব্রেক প্যাড, স্থানীয় শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ফলে এসব পন্যের দাম কমতে পারে।
বাস ও মাইক্রোবাস আমদানি: বাস ও মাইক্রোবাস আমদানিতে শুল্ক কমানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে ১৬ থেকে ৪০ আসনের বাস আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ, ১০ থেকে ১৫ আসনের মাইক্রোবাস আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। ফলে বাস ও মাইক্রোবাস আমদানি খরচ কমবে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন
বিকালে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা